[প্রথমেই বলি গল্পটা পুরো কাল্পনিক, কেউ বাস্তব কিংবা ধর্মের সাথে তুলনা করবেন না]
#ডিম্যান_কিং_সিরিজ#
#সুপ্রিম_বিয়িং#
পর্ব:০৬
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
.
এরিয়েল বইয়ের পাতা থেকে কিছুটা উপরে উড়তে শুরু করলো। তার হাতের ফাইলে থাকা একটা কাগজ সে আকাশের হাতে তুলে দিয়েছে, আকাশ সেটাই দেখছে।
এদিকে জ্যাকের মাথায় ঢুকছে না কাগজে কি লেখা আছে। একটা হিরো হতে হবে এই ওয়ার্ল্ডের। এটা কেমন কন্ট্রাক। তার কাছে সব কিছু রহস্যময় মনে হচ্ছে। জ্যাক অনেকক্ষন ভাবতে লাগলো। তার ভাবনা দেখে এরিয়েল কথা বলতে শুরু করলো আবারো,
-->>নিশ্চয় রিংটা পাওয়ার পর থেকে আপনি মরছেন না। মারা যাওয়ার পরে সেই সময়ের এক ঘন্টা পূর্বে পৌছে যাচ্ছেন।(এরিয়েল)
এরিয়েলের মুখে এই কথাটা শুনে জ্যাক অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। অবাক হবেই না কেনো? সে ব্যতীত অন্য কারো এটা সম্পর্কে জানারই কথা না। যার থেকে সে রিংটা কিনেছে তারও জানার কথা না এই রিং এর ব্যাপারে, তাহলে এই মেয়েটা কিভাবে জানে? এই একটা প্রশ্নের উত্তর জ্যাক পাচ্ছে না।
-->>আচ্ছা আপনি যে বার বার গল্প গল্প বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না সেটা দিয়ে কি বুঝাচ্ছেন।(জ্যাক)
জ্যাক হাতে কাগজের কন্ট্রাকটা নিয়ে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলো। অনেকক্ষন ধরেই জ্যাকের মাথায় এই প্রশ্ন ছিলো, তবে সেটা করার মতো সুযোগ পাচ্ছিলো না সে।
-->>এটা যে গল্পের কেনো চরিত্র না তাকে বলা যাবে না। আপনি কন্ট্রাকে সাইন করলেই সব জানতে পারবেন।(এরিয়েল)
জ্যাক বুঝতে পারলো না সে কি করবে? একটা কন্ট্রাক কি তার জন্য ভালো হবে? কিছু না জেনে কারো সাথে কন্ট্রাক করার ফল সে ভালো করেই বুঝতে পারছে। ঠিক যেমনটা তার ওয়ার্ল্ডে থাকা সময়ে তার সাথে হয়েছিলো। একটা বানরের জন্য তার অস্তিত্ব হারাতে হচ্ছিলো তারই ওয়ার্ল্ডে। তার জন্য তাকে জোরপূর্বক এই ভাঙাচুরা ওয়ার্ল্ডে আসতে হয়েছে।
"ওয়েট এ মিনিট, আমি এসেছি মানে বানরটাও আছে এখানে কোথাও। একবার শুধু আমার হাতে লাগুক, পাথরে চাপা দিবো না সোজা ভাঙা চাঁদের মাঝে রেখে চাপা দিবো।"
জ্যাক বুঝতে পারলো না এরিয়েল কি বলছে, গল্প টল্প এইসব তার মাথায় যাচ্ছে না। কিন্তু সে একটা জিনিস বুঝতে পারলো এখান থেকে সে বের হতে পারবে না। জ্যাক তার হাত পা নারাতে পারছিলো না। মনেহচ্ছিলো সে একটা প্যারালাইসিস অবস্থায় রয়েছে। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে এটা তার আসল শরীর না, বরং তার এবং মেয়েটার মন এই জায়গায় এসেছে। তাদের শরীর এখনো ছাদের উপরে দাড়িয়ে আছে হয়তো।
-->>কন্ট্রাকের ইনফরমেশন সম্পর্কে না জেনে আমি সাইন করবো কিভাবে?(জ্যাক)
জ্যাক কিছুতেই একটা আননোন কন্ট্রাকে সাইন করতে চাচ্ছে না। সে যতোই তাকে হিরো, সুপার হিরো বানানো হোক। দেখা যায় এসব একটা কন্ট্রাক অনেক মারাত্মক শেষে।
-->>ঠিক আছে তাহলে এখানেই বন্ধি থাকেন আজীবন।(এরিয়েল)
এরিয়েলের চেহারায় বিন্দুমাত্র চিন্তার ছাপ নাই। সে হয়তো জানে ভবিষ্যতে কি হবে, যার কারনে কোনো চিন্তাই সে করছে না। কিন্তু জ্যাক চিন্তায় ঘেমে ভিজে যাচ্ছে। একটা মেয়ের সামনে এতোটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে সে পূর্বে পরে নি। তাই অনেকটা বেশীই চিন্তা করছে।
-->>আচ্ছা আমি রাজি, তবে কোথায় সাইন করবো?
আপাতোতো মেয়েটা জ্যাকের থেকে শক্তিশালী, তাই তার কথাটা না শোনা ছাড়া সে কিছুই করতে পারবে না।
"আমি যদি আমার পূর্ব ক্ষমতা ফিরে পায় তাহলে আর আমাকে এসব কন্ট্রাক নিয়ে ভাবতে হবে না।"(জ্যাক ভাবতে লাগলো)
আকাশের মুখ থেকে এ কথা শুনে এরিয়েল আস্তে আস্তে নিচে নামতে শুরু করলো। সে এসে একদম তার সামনে গিয়ে দাড়ালো। জ্যাক কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই মেয়েটা তার ঠোট দিয়ে একটা চুমু দিলো জ্যাকের ঠোটে। জ্যাক সরে যেতে চাইলেও সে পারছে না। আর কিছু বলতেও পারছে না। হঠাৎ মনে হলো কারেন্টের মতো কিছু একটা তৈরী হলো, যেটার পরেই এরিয়েল সরে গেলো তার কাছ থেকে। মেয়েটা এতো মারাত্মক হবে এটা জ্যাক ভাবতেও পারে নি।
"এভাবে আমার ইজ্জতে দাগ লাগাবে সেটা আমি ভাবতেই পারি নি।"
জ্যাক কিছুক্ষনের জন্য হ্যাং হয়ে রইলো। সে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কিছুতেই মিলাতে পারছিলো না। একটা কন্ট্রাকের জন্য চুমুর প্রয়োজন হয় সেটা আজকে জানলো সে।
জ্যাকের চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে গেলো যখন তার নজর বইয়ের পাতার মধ্যে পরলো। বইয়ের পাতা একের পর এক পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিটা পাতা থেকে শুধু একটা নাম মুছে যাচ্ছে। আরফান নামের এক ব্যক্তির নাম মুছে যাচ্ছে প্রতিটা পাতা থেকে, এবং সেটার জায়গায় জ্যাক নামটা বসে যাচ্ছে।
"এটা আবার কি ম্যাজিক!"(জ্যাক অবাক হয়ে গেলো)
জ্যাকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগতে শুরু হলো, তবে আপাতোতো সেটায় মনোযোগ রাখতে পারলো না সে, কারন তার সামনে আবারো প্রজেকশনে কিছু লেখা তৈরী হয়েছে,
-"লিংক সম্পূর্ন হয়েছে "রাইটার" এর সাথে। হোস্ট এখন "রাইটার" এর গল্পের হিরো।"-
-" "রাইটার" এর আপনার প্রতি সম্পূর্ন অধিকার রয়েছে।"-
-" "রাইটার" চাইলে হোস্টের শরীরে প্রবেশ করতে পারবে।"-
-"হোস্ট "রাইটার" এর আদেশ ছাড়া গল্পের কোনো অংশ সম্পূর্ন করতে পারবে না।"-
-" "রাইটার" গল্পের হিরোইন চেন্জ করেছে। বর্তমান নায়িকা "এরিয়েল"।"-
-"হোস্টের উপরে "রাইটার" রেসট্রিকসন তৈরী করেছে। হোস্ট হিরোইন ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে পারবে না।।"-
জ্যাকের হঠাৎ মাথা ঘুরতে লাগলো এসব মেসেজ গুলো পড়তে পড়তে।
-->>কি এসসসবববব।(জ্যাক)
জ্যাক চিল্লিয়ে উঠলো অনেকটা জোরে। তার চিল্লানিতে এরিয়েল কোনো কান দিলো না। সে অনেকটা অবাক হয়েছে। তার জানা মতে বইয়ে আকাশ নামটা উঠার কথা ছিলো।
"এই জ্যাক আবার কে?"(এরিয়েল ভাবতে লাগলো)
মনোযোগ সহকারে সে আকাশের দিকে তাকালো। কিন্তু পরক্ষনেই সে ভাবতে লাগলো,
"এটা নিয়ে ভাবলে হবে না, যেহেতু ওর কাছে রিং অফ ডেড রয়েছে, তাই আমার হিরো লিংক স্কিল বেকাজে যায় নি।" (এরিয়েল ভাবতে লাগলো)
তার সামনে একটা প্রজেকশন রয়েছে, যেটার দিকে সে তাকিয়ে আছে,
""
স্কিলঃ হিরো লিংক(গড লেভেল)
এটা শুধু "রাইটার" এর জন্য প্রযোজ্য, রাইটার তার গল্পের সাইড চরিত্রগুলোকে যে কোনো সময় চেন্জ করার ক্ষমতা রাখে। তবে প্রধান চরিত্র গুলোকে চেন্জ করা কি এতোটা সহজ? এই স্কিলের মাধ্যমে "রাইটার" গল্পের হিরো এবং হিরোইন চেন্জ করতে পারবে এবং গল্পের হিরোর সাথে লিংক হতে পারবে।
ইফেক্টঃ যেমনটা সব গল্পেই হয়, হিরো এবং হিরোইনের হ্যাপি ইন্ডিং। (স্পেশাল ইফেক্টও রয়েছে)
শর্তঃ এক বার ব্যবহার যোগ্য। তাই "রাইটার" কে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
""
এরিয়েল একটা কিছু চিন্তা করলো, সে কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু পরক্ষনেই কিছু না বলে সেখান থেকে হারিয়ে গেলো।
জ্যাক দাড়িয়ে ছিলো হাবলার মতো, কি হয়েছে তার মাথায় তেমন কিছু ঢুকছে না। নানা রকমের চিন্তাভাবনা তার মাথায় ভর করতে লাগলো, কিন্তু কোনো ভাবেই উত্তর খুজে পাচ্ছিলো না সে। রাইটার, গল্প, লিংক কি এসব? সে বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু এটা যে মোটেও ভালো বিষয় না সেটা সে ভালো করে বুঝতে পারলো। সে মেয়েটাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে, কিন্তু মেয়েটাকে খুজে পেলো না কোথাও।
-->>কোথায় গেলো?(জ্যাক)
হঠাৎ পায়ের নিচের বইয়ের পাতাগুলো অনেক জোরে জোরে উল্টাতে শুরু হলো। ঠিক প্রথম পাতায় বইটা থেমে গেলো। বইয়ের প্রথম পাতাটা হঠাৎ জ্যাকের শরীরকে টানতে লাগলো তার দিকে। জ্যাকের শরীর প্যারালাইস হওয়ার কারনে সে এটার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে নি। দেখতে দেখতে একটা পানির ঘূর্নিঝড়ে পরার মতো করে জ্যাককে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বইয়ের পাতার মধ্যে নিয়ে গেলো।
* * *
সেদিন বিকালে,
জ্যাকের চোখ খোলে, সে আশাপাশে একটু লক্ষ করে দেখলো সে একটা রুমের মধ্যে শুয়ে আছে। রুমটা ভালো করে লক্ষ করার পরে জ্যাক বুঝতে পারলো এটা হোস্টেল এর ছাদের রুমটা যেখানে সে কাল রাত কাটিয়েছিলো। জ্যাক হঠাৎ উঠার চেষ্টা করলো, তখনি তার বুকের উপরে একটা কাগজ দেখতে পেলো সে। কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
""
আকাশ চৌধুরী, যেটা হয়েছে সেটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না, তাই আমি চাইবো সেটা সম্পর্কে ভুলে যেতে। যেহেতু এখন থেকে গল্পের হিরো আপনি তাই লেখিকা হিসাবে আমার দায়িত্ব রয়েছে অনেক। তাই আমি চাইবো আমার থেকে কোনো আদেশ অমান্য করবেন না। আপাতোতো টাওয়ারে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন তবে আমার অনুমতি ছাড়া এই এরিয়া এক্স থেকে বের হতে পারবেন না। আমার আদেশ অমান্য করলে আমাকে কিছুই করতে হবে না। আপনি একা একা মারা যাবেন এবং এক ঘন্টা পূর্বে পৌছে যাবেন। আপনি হয়তো আপনার ক্ষমতাকে বুঝতে পেরেছেন সেটা কিভাবে কাজ করে। মৃত্যুর মজাটা অনুভব হয়তো করতে চাইবেন না। এটা ভাববেন না যে শুধু মারা গিয়ে এক ঘন্টা ঘন্টা পরে পিছিয়ে গিয়ে আমাদের কন্ট্রাককে আটকাতে পারবেন। আপনি মাত্র যখন চোখ খুলেছেন এর পূর্বের সময়ে আর যেতে পারবেন না।
গল্পের লেখিকা এবং নায়িকার কাছ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করছি আমাদের কন্ট্রাকটা অনেক স্মুথ ভাবে শেষ হবে এবং অসমাপ্ত গল্পের শেষটা হয়ে যাবে।
""
জ্যাকের মাথায় আবারো হাজার প্রশ্ন উদয় হলো। তবে প্রশ্নের থেকে রাগই বেশী হচ্ছে,
-->>আমি জানতাম এই কন্ট্রাক ভালো কোনো জিনিস না। বানরটার সাথে কন্ট্রাকের পরে আমার এই অবস্থা। যেখানে একটা মেয়েকেও কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই। একবার যদি ঔ মাঙ্কি আমার হাতে আসে তাহলে ওর অবস্থা বারোটা বানিয়ে দিবো।(জ্যাক)
জ্যাক উঠে নিলো। তার ক্ষুধা লেগেছে অনেক। পেটের ক্ষুধায় সে নারাচারা করতে পারছে না। পকেটে থাকার মধ্যে কিছু টাকা এবং একটা কার্ড রয়েছে ব্যাংকের যার মধ্যে এক টাকাও নেই।
-->>এই টাকা এখন খরচ করে ফেললে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি আমি।(জ্যাক)
জ্যাক আকাশের স্মৃতি থেকে জানতে পেরেছে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী জিনিস হলো খাবার। স্বর্নের দামে খাবার বিক্রী হয় এখানে। তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ফলে বসবাস যোগ্য কোনো জায়গা ছিলো না। গাছপালা ৯৯% ই ধ্বংস হয়ে যায়। অক্সিজেনের প্রচুর অভাব দেখা দিতে শুরু হয়। সেই সাথে খাবারের অভাব তো আছেই। টাওয়ার উধয় হওয়ার সাথে সাথে ছাব্বিশটা এরিয়া তৈরী করে এসোসিয়েশান। সেসব এরিয়ার মধ্যে সিমীত অক্সিজেন এর ব্যবস্থা থাকায় গাছপালা জন্ম হতে শুরু হয়, তবে সেটার পরিমানও সিমীত। খাবার সিমীত হওয়ার ফলে সব এরিয়ার মধ্যে অনেক বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। যেটার বিরুদ্ধে এসোসিয়েশান কিছুই করে না।
-->>আপাতোতো আমাকে এতো কিছু ভাবলে হবে না।(জ্যাক)
রুমের মধ্যে একটা ময়লা ক্যাপ ছিলো। যেটাকে জ্যাক মুছে তার মাথায় নিয়ে নিলো। রুম থেকে সে বেরিয়ে ছাদের সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। অনেক চিন্তা তার মাথায় রয়েছে, কিন্তু আপাতোতো সে এতো কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। কারন সাধারন একটা ব্রেইন এতো চাপ নিতে পারবে না।
-->>আমি ক্ষুধায় মরে আবারো এক ঘন্টা পূর্বে পৌছে মরতে চায় না।(জ্যাক)
জ্যাকের যেহেতু ক্ষমতা, সে মরলে এক ঘন্টা পূর্বে পৌছে যাবে। তাই ক্ষুধায় মরলে সেটার মতো কষ্টদায়ক মৃত্যু আর হবে না। তাই তার গন্তব্য খাবারের দিকে।
* * *
To Be Continue
* * *
অনেকের কাছে ছোট লাগতে পারে। তবে বড় করে একবার লিখেছিলাম। বাট ভুলে ডিলিট হয়ে গিয়েছে। তাই আশা করবো সবাই বুঝতে পেরেছেন।