[প্রথমেই বলি গল্পটা পুরো কাল্পনিক, কেউ বাস্তব কিংবা ধর্মের সাথে তুলনা করবেন না]
#ডিম্যান_কিং_সিরিজ#
#সুপ্রিম_বিয়িং#
পর্ব:০৩
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
.
খান পরিবারের ছেলে রাজ খান দাড়িয়ে আছে আকাশের সামনে। তার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। এই শহরে এমন কেউ নেই যে আকাশ চৌধুরীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানে না। এক মাস পূর্বে তার বাবার মৃত্যুর মাধ্যমে সব কিছু হারিয়ে ফেলে আকাশ। তার পূর্বের মতো কোনো ক্ষমতা নেই। যেখানে এক সময় এই শহরের কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতো না সেই আকাশ আজ সাধারন একজন ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া ছেলে। রাজের পুরানো কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। কলেজ কিংবা স্কুল একটাতেও সে আকাশের জন্য শান্তি মতো থাকতে পারে নি। আকাশের টাকা বেশী থাকায় সব মেয়েরা তার উপরের পাগল ছিলো, সবাই তাকেই ফলো করতো। কিন্তু এখন আকাশের কাছে কিছুই নেই। রাজ মনে মনে ভাবছে,
"সবে তো মাত্র তোর হবু বউকে কেড়ে নিয়েছি, আরো কত কি কেড়ে নিবো তোর জীবন থেকে সেটা তো ভাবতেই পারবি না।"
অন্যদিকে আকাশের শরীরে থাকা জ্যাক কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতো লাগলো। কারন দুজন তার সামনেই দাড়িয়ে আছে। জ্যাকের পূর্ব ক্ষমতা থাকলে হয়তো উড়েই চলে আসতে পারতো, তাতে কোনো ঝামেলা তৈরী হতো না। কিন্তু আকাশের স্মৃতি তার কাছে থাকায় সে বুঝতে পারলো অনেকটা খারাপ জিনিস হতে যাচ্ছে।
"ড্যাম মাঙ্কি। সব কিছু ওর জন্য হচ্ছে। আগে বলবে না আমি ডিভাইন গেইটে পা দিলে আমার শরীর সহ আমার পাওয়ার হারিয়ে ফেলবো।"
জ্যাক সামনের দুজনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিলো। তখনি আকাশের এক্স ফিয়ান্সে রাজকে রাগী একটা লুক দেখিয়ে বলতে লাগলো,
-->>দেখছো আমাদের কথাকে কিভাবে ইগনোর করছে?(জারা)
জারার কথায় রাজ অনেকটা রেগে গেলো। সে পারলে আকাশকে এখানেই মেরে ফেলে,
-->>আকাশ চৌধুরী, তো কেমন লাগছে গরীবের জীবন কাটাতে? যদি বলিস তাহলে আমার চাকর হিসাবে রাখতে পারি তোকে। বেতন ভালোই দিবো।
রাজ একটা শয়তানি হেসে কথাটা বললো। তার মধ্যে গর্ব এমন ভাবে ঢুকে গেছে যে সে আকাশকে লজ্জিত না করে ছাড়তে পারছে না। সে জারাকে পাশ থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আকাশকে দেখাতে লাগলো যে তারই এক্স ফিয়ান্সের সাথে সে খোলাখোলি ভাবে এভাবে রোমান্স করছে।
-->>ধন্যবাদ অফারের জন্য। কিন্তু আমার জবের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
জ্যাক কথাটা বলেই তাদের পাশ কাটিয়ে হোস্টেল এর মধ্যে প্রবেশ করলো। রাজ রাগে তার দাঁত কড়মড় করতে লাগলো। কারন আকাশ এখন একটা ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া কেউ না। তাহলে এখনো পূর্বের সেই ব্যবহার সে দেখাচ্ছে কেনো? এখন ওর এমন অবস্থা হয়েছে যে অন্যের কাছে ভিক্ষা করে খেতে হবে। তাহলে এতো এডিটিউট পায় কোথায়।
"আমাকে ওর এডিটিউড ভেঙে চুরমার করতেই হবে।"
রাজ পাশে পার্কিং করা দামী গাড়িটাতে জারাকে নিয়ে গিয়ে বসলো। এবং দুজন লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো।
অন্যদিকে জ্যাক হোস্টেলে প্রবেশ করে রেজিস্ট্রেশন করে নিলো। একটা রুম তার দরকার ছিলো থাকার জন্য। যেটা জোগাড় করতে পেরেছে। হোস্টেলে কোনো রুম ছিলো না। সব গুলোই বুকিং করা ছিলো। রেজিস্ট্রেশন অফিসে বসা লোকটা আকাশের নির্মম অবস্থার কথা জানে। তাই তো,
-->>দেখো আকাশ আমাদের হোস্টেলের সব গুলো রুম বুক করা, তবে তোমার জন্য শুধু আমি এই ব্যবস্থা করতে পারবো। হোস্টেলের ছাদের উপরে একটা রুম রয়েছে, মূলত ছাত্রদের ছাদে যাওয়া নিষেধ। তারপরও তোমার জন্য আমি ঔ রুমটা বরাদ্দ করে দিচ্ছি।
এটাই ছিলো রেজিস্ট্রেশন অফিসে বসা বৃদ্ধ লোকটার। লোকটার থেকে একটা কার্ড নিয়ে জ্যাক পা দিলো ছাদের দিকে। রাতের সময় বলে বাইরে কেউ নেই। সবাই নিজেদের রুমের মধ্যে হয়তো পড়াশোনা করছে, ঘুমাচ্ছে নাহলে আড্ডা দিচ্ছে। তাই জ্যাক শান্তি মতোই ছাদের রুমে পৌছে গেলো।
-->>আকাশের স্মৃতিতে এই ছাদে ভূতের একটা গুজব রয়েছে সেটা কি আদৌও সত্য?(জ্যাক)
জ্যাকের হঠাৎ এই ছাদ সম্পর্কে মনে পরলো আকাশের স্মৃতি থেকে। এই ছাদে ভূতের একটা গুজব রয়েছে। যেটা অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছে। অনেকেই নাকি সাদা পোষাক পরিহিত ভূত দেখেছে। তবে ভূতে জ্যাকের কি করবে? যে একসময় মনস্টারের সাথে লড়েছে তার ভূতে ভয় থাকতেই পারে না।
জ্যাক ছাদের দরজা খুললো তার কার্ডের মাধ্যমে। দরজা গুলো কার্ডের মাধ্যমে খুলে। জ্যাকের এই কার্ডে ছাদের দরজা এবং ছাদে থাকা ছোট্ট রুমের দরজা খুলবে। তাই জ্যাক ব্যতীত অন্য কেউ এখানে আসতে পারবে না। এটা ছাত্রদের সুরক্ষার জন্যই করা হয়েছে। এর পূর্বে অনেক ছেলে নাকি এখানে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তাই কতৃপক্ষ ছাদে সবার প্রবেশ নিষেধ করেছে। তবে শুধু আকাশকেই কেনো এখানে থাকার অধিকার দিলো এটা জ্যাক বুঝতে পারছে না। এই বিষয় নিয়ে সে বেশী ভাবলো না। আপাতোতো একটা ভালো ঘুমের প্রয়োজন তার।
মৃত্যু একজনের শরীরে অনেকটা মানসিক যন্ত্রনার তৈরী করে। এই যন্ত্রনা স্বাভাবিক কারো জন্য সহ্য করা সম্ভব নয় কখনো। কিন্তু জ্যাকের কাছে এটা নতুন কিছু না। সে একবার বেশ কয়েকবার মৃত্যুর যন্ত্রনা অনুভব করেছে। আর তাছাড়া মৃত্যুর যন্ত্রনাটা ড্রাকুলার সাথে করা ট্রেনিং এর মতোই অনেকটা। জ্যাক ছাদের উপরে থাকা ছোট্ট রুম খুলে সেখানে থাকা বিছানায় শুয়ে পরলো। তার অতীতের কথা মনে হতে লাগলো। সেই সময়ে ফিরে গেলো তার স্মৃতি যখন, ড্রাকুলা তার হার্ট বের করছিলো তার শরীর থেকে। আবার মৃত্যুর পূর্বে প্রতিস্থাপন করছিলো।
-->>হোয়েল আমার জীবনের অনেক যন্ত্রনাদায়ক মুহুর্তের মধ্যে একটা ছিলো সেটা।(জ্যাক)
জ্যাক ছোট রুমে থাকা বিছানায় শুয়ে সেলিং এর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ভাবছে তার নাম এখন থেকে কি হবে? এটা দ্বিতীয়বার হয়েছে যে তার নাম পরিবর্তন হচ্ছে। এর পূর্বেও একবার তার নামকে ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। নতুন ওয়ার্ল্ডে কেউ তার পুরাতন নাম সম্পর্কে জানে না।
ঠিক তেমনি জ্যাকের সাথে আবার হচ্ছে। জ্যাক যেহেতু অন্য একজনের শরীরে রেইনকার্নেড হয়েছে, তাই এই শরীর এখন থেকে তারই। সেই সাথে এই শরীরের পরিচয়ও তার।
-->>আমার মনে হচ্ছে আমার জ্যাক সত্ত্বা হারিয়ে যাবে।(জ্যাক)
জ্যাকের হঠাৎ পুরানো একটা কিছু মনে পরলো। সে তার কানে হাত দিলো। তবে খুব অসন্তুষ্ট হলো। সে ভাবতে পারে নি তার আসল শরীরের সাথে এটাও হারিয়ে ফেলবে সে।
-->>ড্যাম মাঙ্কি। আমি জানতাম আমাকে ট্রিক করা হয়েছে। একটা বানরকে কখনোই বিশ্বাস করতে নাই।(জ্যাক)
জ্যাক বুঝতে পারলো তার সিদ্ধান্ত তখন ভুল ছিলো। কিছু ক্ষমতার জন্য তাকে তখনকার কন্ট্রাকটা তৈরী করা ঠিক হয়নি। তারপরও,
-->>রুলার অফ ডেড না? অনেক ইন্টারেস্টিং কিছু দেখতে পাচ্ছি। এমন কিছু আমার ওয়ার্ল্ডে শুনি নি।(জ্যাক)
জ্যাক আর চিন্তা না করে ঘুমিয়ে গেলো।
* * * * *
আকাশ চৌধুরী যে কলেজে পড়াশোনা করে তার নাম এরিয়া এক্স কলেজ। এটা এই শহরের একমাত্র কলেজ। এই সময়ে পড়াশোনা খুব কমই করে, তাই ছাত্রছাত্রী সীমিত একটা কলেজ অনুযায়ী। পৃথিবী অনেক পূর্বেই বিশৃঙ্খলাায় চলে আসছে।
সাল ২০৩০, পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। যার ফলে নব্বই শতাংশ মানুষ মারা যায়। ধ্বংস হয়ে যায় সবগুলো দেশ। সেই ধ্বংসের মধ্যে থেকে বেঁচে থাকা মানুষেরা তৈরী করে ২৬ টা এরিয়া। তাদের নাম ইংরেজি অক্ষর অনুযায়ী এ, বি, সি, ডি ইত্যাদি রাখা হয়। প্রথমে মানুবজাতির বেঁচে থাকতে সমস্যা হলেও একটা আশা দেখা যায় যখন ২০৩২ সালে প্রথম আকাশ ছোয়া একটা স্তম্ভ দেখা যায়। স্তম্ভটাকে নাম দেওয়া হয় টাওয়ার। স্পেসিফিক ভাবে বললে "টাওয়ার অফ গ্রিড"।
টাওয়ারটা সবার জন্য একটা আশা হয়ে দাড়ায়। কারন তার মধ্যে রয়েছে অন্য একটা ওয়ার্ল্ড। পৃথিবী মানুষের ভুলের কারনেই মরে যাচ্ছিলো, কোথাও বিন্দুমাত্র সবুজের নিশানা দেখা যায় না। তাই মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারছিলো। সবাই আশা করছিলো সেই নতুন ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করার জন্য। তবে টাওয়ার নিজে থেকে বেছে নিতো কারা তার মধ্যে প্রবেশ করবে এবং কারা করবে না। তাই সবাই তাদের সুযোগের অপেক্ষায় আছে। অপেক্ষায় আছে এই মৃত গ্রহটা ত্যাগ করার জন্য, যেটাকে তারায় ধ্বংস করেছে।
এরিয়া এক্স মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানদের নিয়ে তৈরী হয়েছে। বাকি এরিয়াদের তুলনায় এই এরিয়ায় সংখ্যা অনেকটা কম। তাছাড়া এখানের সিকিউরিটি ও তেমন ভালো না। তাই এখানে অনেক বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
এসোসিয়েশান একটা সংস্থার নাম। এরা ২০৩০ সালের যুদ্ধের পরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবীকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। বর্তমানে ছাব্বিশটা এরিয়াকে কন্ট্রোল এই এসোসিয়েশানই করে থাকে। সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে। অনেকটা বলা যায় তারা এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবীর গভার্মেন্ট। যারা এটাকে ঠিক করার জন্য কাজ করছে।
* * * *
এরিয়া এক্স এর এসোসিয়েশান অফিসে অনেকটা গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। প্রতি এরিয়ায় একটা করে এসোসিয়েশান অফিস থাকে। যার লিডার একজন হয়। লিডারের আন্ডারে এসোসিয়েশান এর সমস্ত অফিসার কাজ করে। এরিয়া এক্স এর এসোসিয়েশানের মধ্যে ভালোই তোলপাড় তৈরী হচ্ছে। কারন তাদের লিডার প্রতি রাতের মতো আজও নিখোজ। কোথায় যায় কি করে কেউ তার খোজ দিতে পারে নি আজ। মেইন অফিস থেকে লোক এসে অপেক্ষা করছে তবে কেউ লিডারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।
অন্যদিকে এরিয়া এক্স কলেজের ছাত্রদের হোস্টেল এর ছাদে একটা সাদা পোষাক পরিহত মেয়ে দাড়িয়ে আছে। চেহারা এতো সুন্দর যে দু টুকরো হওয়া ভাঙা চাঁদের আলো তার উপরে পরায় মনে হচ্ছিলো মেয়েটার শরীর থেকেই আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। মেয়েটা ঠান্ডা একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে দু টুকরো হওয়া চাঁদের দিকে। তার মুখ থেকে একটা কথা বেরিয়ে আসলো,
-->>আমার নাম এরিয়েল, সবাইকে আমার গল্পে স্বাগতম। আমি একজন লেখিকা। এই ওয়ার্ল্ডে যা কিছু দেখতে পারছেন এখন সব আমার লেখা গল্পের জন্যই হয়েছে।
* * *
To Be Continue
* * *
কেমন হলে জানাবেন। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। কালকে থেকে বড় করার চেষ্টা করবো।