[গল্পটা পুরো কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।]
#Demon_King#
লেখকঃ হৃদয় বাপ্পী
পর্বঃ৩৬
।
।
(ডিমনিক ফরেস্ট)
আজ ২২ দিন হলো টেস্টের। এর মধ্যে দু-তিনটা টিম তৃতীয় জোনে প্রবেশ করেছে। দ্বিতীয় জোন প্রথম জোনের থেকে অনেক বড় হওয়ার ফলে অনেকটা সময় সবার লাগছে সেটা পার করতে। আবার তৃতীয় জোন দ্বিতীয় জোনের তুলনায় অনেকটা বড়। যার কারনে সেটা পার করতে অনেকটা সময় প্রয়োজন হবে সবার।
চেইনের টিম দ্বিতীয় জোন পার করতে পেরেছে। হয়তো আরো কিছুদিন প্রয়োজন হতো যদি তারা স্পাইডারদের ওয়েব থেকে না চলে আসতো। রাতের সময় হয়েছে বিধায় সব টিমই ক্যাম্প করেছে। যেটা টিম চেইনও ফলো করছে।
-->>আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি তৃতীয় জোনে প্রবেশ করতে পারবো।
হঠাৎ জেয়াব কথাটা বললো। সবাই ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে খাবার খাচ্ছিলো এবং গল্প করছিলো। ডুফেস তার চুলটা উপরের দিকে টেনে নিয়ে বলতে লাগলো,
-->>দ্বিতীয় জোনের বিস্ট গুলো তো কিছুই ছিলো না। আমার তো মনে হয় চতুর্থ জোনের ডিমনিক বিস্ট ও কিছুই করতে পারবে না যতক্ষন না আমি দাড়িয়ে থাকবো।
ডুফেস কথাটা অনেক গর্বের সাথে বলতে লাগলো। তার বুকটা ফুলে উঠলো কথাটার সাথে। মূলত সে এলিনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাচ্ছে। কিন্তু সেটা হলো না। তার কথায় কেউ গুরুত্ব না দিয়ে অন্য বিষয়ে গল্প করতে লাগলো।
-->>এলেক্স আমি জানতাম না তুমি রান্না করতে জানো!
হঠাৎ স্নেরা কথাটা বললো। মেয়েরা প্রতিদিনই খাবারের আয়োজন করে, তবে সেটা খাবার মতো হয় না। তারপরও চোখ কান বুঝে খেতে হয় সবাইকে। বেশীরভাগ সময় মাংস পোরানো এবং ফলই খেতে হচ্ছে তাদের। প্রতিটা সময়ই হয়তো মাংস বেশী পুরে যাচ্ছে নাহলে কাচা খেতে হচ্ছে। খাবারের দিকে মানুষ ডিমনিক ফরেস্টে বেশী নজর দেই না। প্রথম সাতদিন একাডেমির খাবারের ব্যবস্থা থাকার কারনে সবাই কিছুটা সুস্বাদু খাবারের মজা পেয়েছিলো। কিন্তু এরপরের কাহিনী,
আসলে কেউই রান্না পারে না। ডিউকের দুই মেয়ে, কাউন্টের এক মেয়ে, তাছাড়া বাকি সবাইও নোবেল পরিবারের সন্তান। কখনো কাউকে রান্না করতে হয়নি। তো কিভাবে তারা জানবে কিভাবে রান্না করতে হয়? একাডেমি প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবস্থা করেছিলো বলেই প্রথম সাতদিন হালকা গরম করেই তারা খেতে পেরেছিলো। কিন্তু তারপরের দিনগুলো অনেক বেদনাদায়ক সবার জন্য। ছেলেরা না হয় চোখ কান বুঝে পোড়া কিংবা অর্ধ কাঁচা মাংস খেতে পারে, তবে মেয়েরা ফল খেয়েই থেকেছে। যাইহোক সবার কষ্ট দেখে আজ এলেক্স তার হাত বারিয়ে দিয়েছে।
"আমি নিজেও রান্না পারি না। তবে ওদের কাবাব এর থেকে কিছুটা হলেও ভালো হবে আমারটা।"(এলেক্স ভাবছে)
এতোদিন মেয়েরা সোজা আগুনে ফেলে দিতো মাংসের টুকরোকে, যার কারনে মাংস পুরে যেতো কিংবা এক পাশে কাঁচা থাকতো। এলেক্স যেহেতু পৃথিবীতে অনেক বারবিকিউ পার্টি করেছে তাই সাধারন সাইন্স সে জানে। দ্বিতীয় জোন থেকে তৃতীয় জোনে আসার সময় অনেকগুলো খরখোসের সাথে তাদের মুলাকাত হয়। খরগোস গুলো ছোট একটা গুহার মধ্যে বাসা করে থাকছিলো এই গহীন বনের মধ্যে। যেটা কোনো ডিমনিক বিস্ট কিংবা শক্তিশালী বিস্টের হাতে না পরলেও এলেক্সের হাতে ঠিকই পরে।
-->>আমি কখনো খরগোসের মাংস খাই নি। এটা কেমন হবে কে জানে?
মাইরা কথাটা অনেক আগ্রহে বললো। এই ওয়ার্ল্ডে খরগোস অনেক রেয়ার একটা প্রানী। যার দেখা খুব কমই পাওয়া যায়। আর এই জন্যই এই প্রানীকে নোবেল কিংবা রয়েল পরিবারে দেখা যায়। সাধারনত খরগোস ধনীদের কাছে থাকে শোপিচ হিসাবে। তাই এটা খেতে কেমন অনেকেই জানে না।
তবে অন্যদিকে এলেক্স যখন টাওয়ার অফ স্লোথের মধ্যে ছিলো। তখন তাকে প্রতি নিয়তই বিভিন্ন ধরনের প্রানী হত্যা করে তাদের খেতে হতো। যদিও কাছে মশলাপাতি কিছু নেই তারপরও এলেক্স জানে কিভাবে তার খাবারকে হালকা সুস্বাদু করতে হয়।
এলেক্সের ব্যাগে বেশ কয়েকটা চিকন লোহার বড় গোল টুকরো ছিলো। খরগোসের চামড়া ফেলার কাজ অনেক পূর্বেই হয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্য দিয়ে এলেক্স লোহার টুকরো গুলো ভরে দিলো। সবাই খুব আগ্রহে দেখছে। বিশেষ করে মেয়েদের নজর এদিকে বেশী। মেয়েরা যতই বলুক সে রান্নায় আগ্রহী না, তারপরও রান্না তাদের ডি এন এ এর মধ্যে রয়েছে। তাই রান্না শেখার বিষয়ে তাদের কৌতূহল জাগবেই।
যেহেতু কোনো মশলাপাতি নেই এখানে তাই এলেক্স প্রকৃতির ব্যবহার করছে এখানে। বেশ অনেক রকমের ফল সংগ্রহ করেছে তারা পূর্বে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যারি রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রকমের স্বাদের সাথে আসে। ঝাল, লবনাক্ত এবং মিষ্টান্ন এই তিন ধরনের স্বাদের ব্যারি সংগ্রহ করেছে এলেক্স। তাই খুব ভালো কিছু সে তৈরী করতে পারবে এখানে।
এলেক্স ফরেস্টের মধ্যে অনেক প্রয়েজনীয় একটা ফল পেয়েছিলো। যেটার নাম সে জানে না। তবে ফলটা একদম রান্নার তেলের মতো। এলেক্স ফলটার নাম দিয়েছে তেল ফল। অবশ্য আসল নাম তার জন্য ম্যাটার করে না। এলেক্স তেল ফলের অনেকটা রস বের করে নিয়েছে। সেই সাথে ঝাল, মিস্টি এবং লবনাক্ত ব্যারির রসও একত্র করে পেস্টের মতো তৈরী করেছে। প্রতিটা খরগোসকে সেই পেস্টে মাখিয়ে নিলো। এরপর প্রতিটা লোহার খন্ডকে আগুনে ঝলসাতে দিলো। আগুনে টপ টপ করে ফুটতে লাগলো খরগোসের মাংস, সেই সাথে একটা সুস্বাদু ঘ্রান সবার নাকে বাসা বাধলো। সবাই কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গেলো যে তারা ডিমনিক ফরেস্টে রয়েছে। আপ্রান চেষ্টা করছে ঘ্রান দিয়েই ক্ষুধা মিটাতে।
-->>এলেক্স তোমার আম্মা মনে হয় অনেক ভালো রান্না করে তাই না?
মাইরা আবারো একটা প্রশ্ন করলো। এতোক্ষন এলেক্স কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দেই নি। রান্নার সময় সে কথা বলতে পছন্দ করে না। এটা সে না পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ বাবুর্চি রান্নার সময় কথা বলতে পছন্দ করে না। একটা কাবাব তৈরী করে এলেক্স নিজেকে আসলেই অনেক বড় লেভেলের বাবুর্চি মনে করছে।
-->>আসলে আমার আম্মার রান্না খাওয়ার যোগ্য না। তাই আমার বাবা ই রান্নার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন।
এলেক্স কথাটা সবার দিকে তাকিয়ে বললো। সবাই খাবারের দিক থেকে এক নজর পলক সরিয়ে এলেক্সের দিকে রাখলো। কিন্তু পরক্ষনেই আবার আগুনে ঝলসানো খরগোসের মাংসের দিকে পরলো। বেশ কিছুক্ষন পরে কাবাবটা তৈরী হয়ে গেলো। পূর্বের মতো অর্ধ কাঁচা কিংবা পোড়া হয় নি এবারের খাবার টা। আগুনে সঠিক পরিমানে ঝলসানোর মাধ্যমে কাবাবের লুকটাও অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। যদিও মশলাপাতি থাকলে আরো সুন্দর ঘ্রান তৈরী করানো যেতো। তবে আপাতোতো এটাই যথেষ্ট।
-->>আমি আসলেই গ্রিলকে অনেক মিস করতেছি এখন।
হঠাৎ এলেক্সের মুখ থেকে আস্তে করে এই কথাটা বেরিয়ে গেলো। কেউ এদিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তার কথা শুনতে পেলো না। সবাই তাদের অংশের কাবাবটা নিয়ে নিলো তাদের হাতে। কেউ অন্যদিকে তাকাচ্ছে না নিজেদের হাত ছাড়া। যেকোনো খাবারের সবচেয়ে লোভনীয় দিক তিনটা। এক তাদের স্বাদের, দুই তাদের ঘ্রান এবং তিন তাদের লুক। তিনটার একটা যেকোনো খাবারে থাকলেই সে মানুষের আকর্ষন কেড়ে নিবে। তবে তিন লোভনীয় দিকের সবচেয়ে মারাত্মক হলো ঘ্রান। যদি কোনো খাবারের ঘ্রান একদম বেশী সুস্বাদু হয় তাহলে সেটা বিষ হলেও মানুষ চেষ্টা করবে খেতে। এটাকে মানুষের নেচারাল দিক বলা হয়।
সবাই খুব তৃপ্তির সাথে খাবার খাচ্ছে। তাদের মনে হচ্ছে এরকম খাবার তারা কখনো খায় নি। খরগোসের মাংস এমনিতেই কেউ ট্রাই করে নি পূর্বে। সেই সাথে এরকম ভাবে পোরানো তারা পূর্বে দেখে নি। সব মিলিয়ে নতুন একটা খাবার তাদের সামনে। শুধু ঘ্রানে নয় বরং স্বাধেও অনেক সুস্বাদু। তাইতো অন্য দিকে কারো নজর নেই।
কিন্তু বাবুর্চি এলেক্স কাবাবটা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই তার বমি করতে মন চাচ্ছিলো। পোড়া কিংবা অর্ধ কাঁচা পূর্বের কাবাবের থেকেও বিশ্রী মনে হচ্ছিলো স্বাদটা এলেক্সের কাছে। তবে কিছু করার নাই। এলেক্স সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিলো। বাকি সবাইকে তৃপ্তির সাথে খেতে দেখে এলেক্সের চোখ কপালে উঠে গেলো,
"এই ওয়ার্ল্ডের সবার স্বাদ আসলেই খারাপ।"
এলেক্স এসব নিয়ে আর ভাবলো না। এসব নিয়ে ভাবলে আসলেই তার বমি চলে আসবে। নিজের স্বাদকে সে ফেলে দিয়ে খেতে লাগলো চোখ বুঝে। প্রোটিন এর প্রয়োজন আছে তার শরীরে। সে যতই শক্তিশালী হোক না কেনো তার শরীর সেই ভাবে তৈরী না থাকলে সেই শক্তি কোনো কাজেই দিবে না।
এলেক্সের স্বাদের দিকে নজর দিতে হয় না। কিংবা তার পেট ভরার কোনো চিন্তা থাকে না। এলেক্স তার কনজিউমার টাইটেল পাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত খাবার খেয়ে তার পেট সম্পূর্ন ভরতে পারে নি। তাই খাবারের চিন্তা তাকে করতে হয় না। চোখ কান বুঝে যে কোনো খাবারই সে খেতে পারে। কাঁচা মাংস খেলেও কোনো সমস্যা হয় না তার।
এসব জিনিস এলেক্স এক পাশে রাখলো। সবাই আনন্দে খাবার খাচ্ছিলো তাই এলেক্সও তার সময়টা তার স্ট্যাটে রাখলো।
""
""
নেইম: এলেক্স
জব:হোস্ট অফ জিডুরী
সাব-জব: এসাসিন
লেভেল: ৪০
স্ট্রেন্থ : ৪০
ভাইটালিটি : ৪০
এজিলিটি : ৫৫
স্টেম্যানা : ৫০
ইন্টেলিজেন্স : ৪৪
লাক্ : ১২
স্ট্যাট পয়েন্ট: ২৫
""
""
এলেক্স তার স্ট্যাট পয়েন্টের দিকে নজর রাখলো। সেটা বেশী বৃদ্ধি হচ্ছে না। প্রতি লেভেলে পাঁচ করে বৃদ্ধি অনেকটা কম হয়ে যায় এলেক্সের জন্য।
"পঞ্চাশ লেভেলে কি আদৌও আমি আমার স্ট্যাট পয়েন্ট বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবো?"
এলেক্সের "নাইটমেয়ার" গেমের একটা কনটেন্ট এর কথা মনে হলো। যেটা পঞ্চাশ লেভেলে পা দিলে সকল প্লেয়ারকে দেওয়া হতো। যদি এলেক্সও সেই সুযোগটা লাভ করতো তাহলে তো অনেক ভালোই হতো।
"ত্রিশ এবং চল্লিশ লেভেলে উঠার কোনো রিয়ার্ড পেলাম না।"(এলেক্স কিছুটা হতাশ হলো)
এলেক্স প্রতি দশ লেভেলে উঠার পরে কিছু না কিছু গিফটের আশা করেছিলো। তবে ত্রিশ এবং চল্লিশ লেভেলে সে কিছুই পায় নি। আপাতোতো তার কাছে যে ক্ষমতা রয়েছে তাতে সে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকটা সন্দেহ করছে।
* * *
সবার খাওয়ার শেষে ঘুমানোর সময় হয়ে গেলো। নিজ নিজ তাবুর মধ্যে প্রবেশ করছে সবাই। এলেক্স তার তাবুর দিকে যাওয়ার জন্য পা দিলো। কিন্তু সে হঠাৎ পিছনে ঠান্ডা হাওয়ার অনুভূতি পেলো। তার পিছনে এলিন দাড়িয়ে ছিলো। এলিনের হাতের ব্রেসলেটটা জ্বলতে লাগলো। এলেক্সের মনে হচ্ছিলো ফিনিক্সটা এখনি বের হয়ে যাবে।
-->>তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে একটা।(এলিন)
এলিনকে অনেকটা সিরিয়াস দেখা যাচ্ছে। এলেক্স বুঝতে পারছে না হঠাৎ মেয়েটা তাকে কি বলবে। মেয়েটা মোটেও সুবিধার নয়। তারপরও তার মিশনের জন্য মেয়েটার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হচ্ছে।
-->>হ্যা বলেন।
এলেক্সের উত্তর স্বাভাবিক ছিলো। তবে এলিনের কথায় সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারলো না।
-->>তৃতীয় চাবির হোস্ট টাওয়ার থেকে বের হয়েছে। আমার মনে হয় সে আমাদের দুজনের জন্য আসছে।(এলিন)
এলিনের কথাটা শুনে এলেক্সের মাথায় বেশী কিছু ঢুকলো না। তবে সে বুঝলো যে বিলজবাব এর তৃতীয় ম্যাজিকাল আইটেমের হোস্টের কথা বলছে এলিন।
-->>আমাদের জন্য আসছে কেনো?(এলেক্স)
এলেক্স কিছুটা ধরতে পারলেও এখনো সিওর না সে। এলিনের সাথে সেদিন ছাড়া একা এখনো কথা বলতে পারে নি সে। আর সেদিন তেমন গুরুত্বপূর্ন কোনো তথ্যও জানতে পারে নি। তাই সঠিক জিনিস ধরতে পারছে না।
-->>আমাদের জন্য না। সে আসছে আমাদের ম্যাজিকাল আইটেমের জন্য। আর আমাদের ম্যাজিকাল আইটেম নিতে হলে অবশ্যই তাকে আমাদের হত্যা করতে হবে। আর টাওয়ার থেকে যেহেতু সে আসছে মানে উচ্চ লেভেল এর কেউ হবে সে।(এলিন)
এলিন বেশী তথ্য দিলো না। তবে এলেক্স একটা সুযোগ পেলো আরো তথ্য বের করার। তাই সে বিষয়টা হাত ছাড়া করলো না।
* * *
To Be Continued
* * *
কেমন হলো জানাবেন।