[গল্পটা পুরো কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।]
#Demon_King#
লেখকঃ হৃদয় বাপ্পী
পর্বঃ২৪
।
।
ফায়ার এম্পায়ারের মাঝের দাড়িয়ে আছে বিশাল বড় একটা টাওয়ার। যেটার নাম টাওয়ার অফ গ্লাটোনি। টাওয়ারে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য একটা বিশাল গেইট রয়েছে, যেটা দিয়ে একসাথে হাজার হাজার ব্যক্তি প্রবেশ এবং বের হতে পারবে। গেইটটা অনেকটা একটা পোর্টালের মতো। যেটা সব সময়ই চালু থাকে। সাধারনত সচারচার কেউ গেইট ব্যবহার করতে পারে না। বাইরে থেকে টাওয়ারে প্রবেশ করতে হলে একাডেমির আদেশের প্রয়োজন হয়। তবে ভিতর থেকে আলাদা প্রশ্ন।
টাওয়ারের মধ্যে দুই ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এক যারা বাইরে থেকে প্রবেশ করে এবং দুই যারা টাওয়ারেই বসবাস করে। টাওয়ারের দেখা পাওয়া যায় এক হাজার বছর পূর্বে। সময়ের সাথে সাথে যারা প্রথমে টাওয়ারে প্রবেশ করেছিলো তারা টাওয়ারে সেখানেই বসবাস করতে শুরু করে। যার ফলে টাওয়ারের মধ্যে নতুন করে সভ্যতা তৈরী হয়ে যায়। যারা টাওয়ারের বাইরে থেকে টাওয়ারে প্রবেশ করে তাদেরকে আউটসাইডার বলা হয়, অন্যদিকে যারা টাওয়ারেই থাকে তাদেরকে ইনসাইডার বলা হয়। এভাবেই টাওয়ারের মধ্যে কিংবা বাইরে দু ধরনের মানুষকে আলাদা করা হয়ে থাকে।
টাওয়ারের মধ্যে থেকে ইনসাইডাররা সাধারনত বের হয় না বাইরে। আউডসাইডাররা যখন ইচ্ছা টাওয়ার থেকে বের হতে পারলেও, ইনসাইডারদের অনেক নিয়ম মেনে টাওয়ার থেকে বের হতে হয়। তাই কেউ এতো ঝামেলা করে বের হতে চাই না। যেহেতু টাওয়ারেই তাদের সব কিছু আছে তাই বের হওয়ার কোনো গুরুত্ব তারা খুজে পাই না।
আজ টাওয়ার থেকে দুজন ব্যক্তি বের হয়েছে। দুজনের একজন বাইশ বয়সের মেয়ে এবং অন্যজন পনেরো বছরের একজন মেয়ে। দুজনে বের হওয়ার সাথে সাথে হুড দিয়ে নিজেদের মাথা ঢেকে নিলো। দুজনে পরিচয়ে একে অপরের আপন বোন। দুজন একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগলো। তাদের কথায় তাদের নাম উল্লেখিত হলো। বড় বোনের নাম মারফি, এবং ছোট জনের নাম মারফা। মারফা মারফিকে বলতে লাগলো,
-->>আমাদেরই কেনো এতো কষ্ট করতে হবে। আমার তো মনে হয় না এতো বছর পরে তারা জীবিত আছে। আর থাকলেও এভাবে বাইরে কেনো থাকবে?(মারফা)
-->>চুপ করে থাকো মারফা। বাবা আমাদের এই মিশন খুব সাবধানের সাথে করতে বলেছে, তাই অহেতুক কথা না বলে মিশনে মনোযোগ দাও।(মারফি)
-->>তাই বলে এগারো বছর ধরে নিখোজ ব্যক্তিদের খুজতে হবে আমাদের? এর পূর্বেও তো তাদের খুজে পাওয়া যায় নি। এতো বছর পর বাবার আবার তাদের কথা মনে হলো কেনো?
-->>বাবা কি ভাবছে আমরা সেটা বলতে পারবো না। তবে আমাদের এটা নিয়ে কমপ্লেন করলে হবে না। যেটা করতে বলা হয়েছে সেটা আমাদের করতে হবে।
-->>ঠিক আছে ঠিক আছে। তারাতারি কাজ শেষ করে আমাকে যেতে হবে আবার টাওয়ারে। তাই দেরী না করে চলো শুরু করি।
দুজনেই সাথে সাথে গায়েব হয়ে গেলো সেখান থেকে। তার আকাশে এতো স্পিডে লাফ দিয়ে যে মনে হয়েছে উধাও হয়ে গেছে। যদিও দুজন উড়তে পারে না, তারপরও লাফ দিয়ে অনেকটা জায়গা পার করতে পারছে দুজনেই। যেখানে লাফ দিয়ে পরছে সেখানে একদম কোনো শব্দই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে দুটো বিড়াল লাফিয়ে যাচ্ছে একসাথে।
"টাওয়ারের মধ্যে মারফার সার্চ স্কিল অনেক উন্নত। বাবা আমাদের দুজনকে কেনো পাঠিয়েছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আদৌও কি তারা এখানে রয়েছে। পূর্বে তাদের বিষয়ে কোনো খোজই পাওয়া যায় নি। এবার কি আমরা কিছুটা বের করতে পারবো?"
মারফি অনেক বড় বড় লাফ দিচ্ছে এবং কথাটা ভাবছে। দুজনের ওয়াটার এট্রিবিউট থাকায়, তারা একটা স্পেশাল স্পেল ব্যবহার করতে পারে। যেটা তাদেরকে বাইরের সবার দৃষ্টিতে অনেকটা অদৃশ্য করেই ফেলে। এর মাধ্যমে কোনো চিন্তা ছাড়ায় যাতায়াত করা যায়।
* * * *
চেসলি হিলার টাওয়ারের তার চেম্বারে বসে ছিলো। সে এলেক্সের ডার্ক এনার্জি নিয়ে গবেষনা করছিলো। অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় সে এই এনার্জি সম্পর্কে জানতে পারছিলো।
"আমি এরকম এনার্জি কখনোই দেখি নি। সামান্যতম এনার্জি অন্য এনার্জিদের এবজোর্ব করছে। স্পেলের মাধ্যমে কিংবা পিলের মাধ্যমে সামান্য এনার্জিকে এবজোর্ব করা যায়, কিন্তু এভাবে এনার্জিই এনার্জিকে এবজোর্ব করে এটা আমার প্রথম দেখা"
চেসলি অবাক হচ্ছে যতই পরীক্ষা করছে। সে এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে কেনো এলেক্সের সাথে প্রথম দিন দেখা করার ফলে তার অবস্থা এমন হয়েছিলো। চেসলির গুরুত্বপূর্ন একটা ম্যাজিকাল আইটেমও কিভাবে সাধারন হয়ে গিয়েছে এটাও বুঝতে পেরেছে সে। হঠাৎ সে বলে উঠতে লাগলো,
-->>মারিয়া আমি জানি না কি লুকাচ্ছো তুমি, কিন্তু তোমার ছেলে যে মানুষ নয় এটার প্রমান এই এনার্জিই দিচ্ছে। আমাকে আরো কিছু গবেষনা করতে হবে।
চেসলি তার গবেষনায় বেশী ব্যস্ত থাকায় কখন তার রুমের মধ্যে দুজন ব্যক্তি প্রবেশ করেছে এটা সে জানেই না। দুজন হঠাৎ চেসলির বলা কথা শুনতে পেয়ে বলতে লাগলো,
-->>আমি ভাবছিলাম আমাদের হয়তো সময় লাগবে কোনো ক্লু বের করা। কিন্তু এতো সহজেই যে একটা ক্লু বেরিয়ে যাবে এটার আশা করি নি।
হঠাৎ কারো শব্দে চেসলি পিছনে তাকালো। সে জানেই না যে সে ব্যতিত রুমে অন্য কেউ ছিলো। যেহেতু সে অনুভব করতে পারে নি কারো উপস্থিতি তাই অনেকটা চিন্তায় পরে গেলো। অপরিচিত কাউকে এভাবে দেখতে পারবে এটা চেসলি আশা করে নি। তাই তার মুখ দিয়ে একটা প্রশ্নই বেরিয়ে উঠলো,
-->>কে আপনারা?
দুজন যারা চেসলির রুমের জানালা দিয়ে ঢুকেছে তারা মারফি এবং মারফা ছাড়া কেউ নই। প্রথম কথাটা মারফিই বলেছিলো। কিন্তু কারো ইনফরমেশন বের করার ক্ষেত্রে মারফা এক্সপার্ট। তাই সে কথা বলতে লাগলো,
-->>আমাদের পরিচয় দিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমরা আসল কথায় আসি। তোমার কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে যেটা আমাদের খুব কাজে দিবে। তাই সব কিছু বলতে শুরু করো।(মারফা)
একটা ছোট মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনাটা চেসলি আশা করে নি। কিন্তু সে দুজনের এনার্জি সম্পর্কে একটু ধারনা পেলো। দুজন চেসলির থেকে ভিন্ন ওয়ার্ল্ডে আছে এনার্জির ক্ষেত্রে, তাই সে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো।
-->>কি ইনফরমেশন? আর কি বলছেন? আপনারাই বা কারা?
চেসলি ভেবে পাচ্ছিলো না সে কি বলবে। কিন্তু কিছুটা হলেও সে ধারনা করতে পেরেছে কারা হতে পারে। যদিও মারিয়া এবং এলমন্ড কিছুদিন হলো এই কিংডমের ক্যাপিটালে এসেছে। কিন্তু তাদের অনেক স্পাই রয়েছে টাওয়ারের বাইরে। তাই দুজনকে খুজে বের করা কোনো ব্যাপারই না। তারপরও চেসলি সিওর না। তাই ব্যাপারটা এরিয়ে গেলো সে।
-->>চেসলি, যে এগারো বছর পূর্বে টাওয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিম এলেক্স এর সদস্য ছিলো। সেই সাথে টিম এলেক্স এর টিম লিডার এলমন্ডের এক্স এবং সাথে টিম লিডার এলমন্ডের স্ত্রী মারিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রাক্তন এক্স এবং বেস্ট ফ্রেন্ডের খবর তোমার থেকে কেউ মনে হয় না আমাদের দিতে পারবে।(মারফা)
মেয়েটার কথায় চেসলির সন্দেহ সঠিক হলো। তারা টাওয়ারের মধ্য থেকেই এসেছে। কিন্তু এতো তারাতারি যে তারা মারিয়া এবং এলমন্ডের খোজ করতে আসবে সেটা চেসলি কল্পনা করে নি। কিন্তু সে এভাবে তাদের সম্পর্কে সে বলতে পারবে না। এ নিয়ে মারিয়ার সাথে কথা বলতে হবে।
-->>চুপ আছে মানে নিশ্চয় তাদের সম্পর্কে কিছু জানো। তাই মনের মধ্যে কিছু না রেখে আমাদের বলে দাও।(মারফা)
চেসলি বুঝতে পারলো যে মেয়েটা ছোট হলেও অনেক চালাক। যেহেতু বড় মেয়েটা কোনো কথা বলছে না তাই সে বুঝতে পারলো ছোটজন হয়তো ইনফরমেশন বের করার ক্ষেত্রে এক্সপার্ট।
-->>আমাদের টিম ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয় না।(চেসলি)
চেসলি সহজ মিথ্যা বলে দিলো। সে জানে ছোট মেয়েটা স্বাভাবিক নয়। তাই এই মিথ্যা সে লুকাতে পারবে না।
-->>টাওয়ার কি জিনিস এটা তো নিশ্চয় জানো। কত রকমের ম্যাজিকাল আইটেম থাকে তার নামই আমি সঠিক ভাবে বলতে পারি না। তবে আমার কাছেও একটা ম্যাজিকাল আইটেম আছে। যেটা আমাকে সত্য মিথ্যা নির্ধারন করতে সাহায্য করে। যখন আমার সামনে কেউ মিথ্যা বলে তখন তার সাথে অনেক খারাপ কিছু একটা হয়। তাই আমি একটা ওয়ার্নিং দিতে চাই, আমার ম্যাজিকাল আইটেম যেনো ব্যবহার না করতে হয়।(মারফা)
চেসলি মেয়েটার কথা শুনে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো। সে এবার নির্ধারন করতে পারলো এই মেয়েটা কে। তাই এখানে তার কোনো মিথ্যা বলার সুযোগ রইলো না। চেসলির কাছে সত্য কথা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না। কারন মেয়েটা সত্য বললে তার কাছে থাকা ম্যাজিকাল আইটেমের কারনে চেসলির বলা প্রতিটা মিথ্যা কথা বলার ফলে তার একটা করে অঙ্গ নষ্ট হতে শুরু করবে। যদিও চেসলি সিওর না আসলেই কি সেই ম্যাজিকাল আইটেমের কথা বলছে মেয়েটা, তারপরও সে কোনো রিক্স নিতে চাচ্ছে না। একদিন না একদিন তাদেরকে ফিরতে হবে। আর এটা তাদের জন্য ভালো একটা সময়।
চেসলি কিছু বলতে যাবে তখনি চেসলির রুমের দরজা খুলে গেলো। একটা আনএক্সপেক্টেড পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গেলো। মারিয়ার কিছু মেডিসিন তৈরীর উপকরনের প্রয়োজন পরছিলো। তাই সে হিলার টাওয়ারে চেসলির কাছে এসেছে সেটা নিতে। তবে এভাবে যে পরিচিত মুখ দেখতে পাবে সেটা মোটেও আশা করে নি সে।
মারফা অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। সে ভাবছিলো যে এবার সহজ হয়ে যাবে তার এখানে আসায়, কিন্তু এতোটাও সহজ হয়ে যাবে সেটা আশা করে নি। তার বড় বোন মারফি কোনো কথা না বলেই গিয়ে মারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। মারফা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। সে তার বোনের মতো নয়। তার মধ্যে রাগ অভিমান রয়েছে যেটা ভাঙে নি এতো সহজে। এগারো বছর, মোট এগারো বছর কোনো খোজ ছিলো না মারিয়ার। কোথায় গেছে কেমন আছে? মরে গিয়েছে নাকি বেঁচে আছে কোনো কিছুই জানা যায় নি। তাই অভিমান হওয়ারই কথা। মারফি সেই অভিমান গুলো দূরে ফেলে মারিয়াকে জরিয়ে ধরলো গিয়ে। যতই হোক মায়ের মতো মানুষটাকে অনেকটা বছর পরে দেখতে পেয়েছে সে।
মারিয়া কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। এমন পরিস্থিতে সে পরবে আগে জানতো না। সে ভাবছিলো টাওয়ার থেকে লোক ঠিকই আসবে তাদের খোজে, কিন্তু মারফা এবং মারফি আসবে এটা আশা করে নি। দুজন মেয়ের মতোই মারিয়ার কাছে। মায়ের মতো বড় করেছিলো, যদিও মারফা তেমন বেশী ভালোবাসা পাই নি, কারন মারফা ছোট থাকতেই মারিয়া পালিয়ে এসেছিলো সব কিছু ফেলে। তারপরও আনন্দ মারিয়া ধরে রাখতে পারলো না।
-->>পরিস্থিতি কেমন ঔখানে?(মারিয়া)
মারিয়া মারফির মাথায় হাত দিয়ে প্রশ্ন করলো। সে মারফার দিকে হাত বারালো। যে মারফা অভিমান করে দাড়িয়ে ছিলো সে তার অভিমান ধরে রাখতে না পেরে দৌড়িয়ে মারিয়াকে জরিয়ে ধরলো। মারফি উত্তর দিলো,
-->>তেমন ভালো না। বাবা অনেক খোজার চেষ্টা করেছে আপনাকে। কিন্তু এত বছর কোনো খবরই পাই নি আপনার।(মারফি)
-->>তাহলে আমাদের যেতেই হবে। তবে আরো যে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।(মারিয়া)
-->>কিন্তু বাবার আদেশ আপনাকে পেলেই এই চিঠিটা দিতে।(মারফি তার হাত থেকে একটা চিঠি মারিয়ার হাতে দিতে চাইলো)
মারিয়া চিঠিটা না নিয়ে মারফিকেই রাখতে বললো।
-->>এলেক্স তার একাডেমির টেস্ট সম্পূর্ন করছে। তাই আমাদের আপাতোতো টাওয়ারে যেতে সময় লাগবে। চিঠিটা এলেক্স ফিরে আসলেই দিয়ো আমার হাতে।
মারিয়া জানে চিঠিটা পড়লে তাকে টাওয়ারে যেতেই হবে। তাই এটা সে এখনি পড়বে না। মারিয়া দেখতে পারলো এলেক্সের নাম শুনে তার দুই ভাগ্নী অনেকটা অবাক হলো। তাই তাদেরকে নিশ্চিত করার জন্য মারিয়া বলতে লাগলো,
-->>আমার এগারো বছরের ছেলে এলেক্স। তোমাদের কাজিন এবং সেই সাথে আমাদের এম্পায়ার এর ভবিষ্যৎ।(মারিয়া)
* * *
To Be Continue
* * *
কেমন হলো জানাবেন। কোথাও ভুল ত্রুটি থাকলে বলবেন আমাকে।