#ডিম্যান_কিং_সিরিজ#
#সুপ্রিম_বিয়িং#
পর্ব:৬৮
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
.
জ্যাক তার মাস্টার ডোয়ার্ক মল্টের সাথে ফাইট করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। মল্ট জ্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে কোনো নড়াচড়া করছিলো না। অন্যদিকে জ্যাক তার হাত পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করে নিচ্ছিলো। এতোক্ষন ট্রেনিং করার ফলে তার সারা শরীরেই ব্যথা রয়েছে। ব্যথাকে জ্যাক এক সাইডে রেখে তার মাস্টারের সাথে ফাইট করতে প্রস্তুত হলো।
"আমি জানি আমার মাস্টারের সামনে আমি কিছুই না। তারপরও আমাকে দেখতে হবে সে আপাতোতো আমার থেকে কতটা শক্তিশালী।" (জ্যাক ভাবছে)
জ্যাক সিওর ছিলো সে মল্টকে হারাতে পারবে না। তবে তারপরও সে এক সময়ে একজন কন্সটেলেশন ছিলো। আর একজন কন্সটেলেশন হওয়ার ফলে তার প্রাইড একজন সাধারণ মানুষের কাছে হার মেনে নিতে পারে না। যদিও সে তার সামনের মানুষটাকে নিজের মাস্টার মেনে নিয়েছে তারপরও সেটা শুধু শেখার জন্য। যদি জ্যাক তেমন শক্তিশালীও না হয় তাহলে তাকে শক্তিশালী হতে হবে এবং ডোয়ার্ক মল্ট মানে তার মাস্টারকে হারিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে কন্সটেলেশন গুলোই সর্বোচ্চ স্পিসিজ।
"সুপার হিউম্যান স্ট্রেন্থ"
জ্যাক তার এট্যাক গুলো প্রথমে করতে লাগলো, যেহেতু এটা একটা ফাইট ছিলো তাই প্রথম থেকেই জ্যাক সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। জ্যাক তার এবিলিটি সুপার হিউম্যান স্ট্রেন্থ বা সুপার স্ট্রেন্থ ব্যবহার করেছে৷ এটা ব্যবহার করলে তার শক্তিশালী একটা সাধারণ মানুষের থেকেও পাঁচ গুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়। সে তার সুপার হিউম্যান স্ট্রেন্থের সাহায্যে মাটিতে জোরে একটা কিক করে সেই ফোর্সের সাহায্যে অনেক স্পিডে মল্টের সামনে যেতে লাগলো, যেহেতু সে জানে যে মল্টের সাথে সে সামনা সামনি ফাইটে পারবে না তাই জ্যাক কিছুটা শর্টকার্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করলো।
"গোস্ট মুড"
জ্যাকের শরীরটা সাথে সাথে ঝাপসা হয়ে গেলো। সে এখন এমন একটা এবিলিটি ব্যবহার করেছে যার সাহায্যে সে যেকোনো বস্তুর ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। মূলত এটার লজিক নিয়াক কখনো বের করতে পারে নি। তবে এখন জ্যাক জানে এই এবিলিটি কিভাবে কাজ করে। এই এবিলিটিটা ব্যবহার করলে জ্যাকের পুরো শরীর ভাইব্রেট হতে শুরু করে। ভাইব্রেটের স্পিড এতো থাকে যে তার পুরো শরীর অন্য একটা বস্তুর ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে চলে পারে। অনেকটা ফ্লাশ থিউরির মতো। আর অনেক স্পিডে ভাইব্রেট হয় বলেই তার শরীর এখন ঝাপসা দেখাচ্ছে। জ্যাক মনে করেছিলো এই এবিলিটি ব্যবহার করে সে মল্টের শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে পিছনে চলে যাবে, কিন্তু সেটা কাজ করলো না। জ্যাক সোজা মল্টের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে গেলো। তার এবিলিটি সাথে সাথে ক্যান্সেল হয়ে গেলো।
"আমি বুঝলাম না এটা কি হলো?" (জ্যাক)
জ্যাকের এবিলিটিতে কোনো সমস্যা ছিলো না। তার স্ট্যােমানা ট্রেনিং এর ফলে কম থাকলেও এতো দ্রুত তার এবিলিটি ক্যান্সেল হওয়ার কথা ছিলো না। জ্যাক বুঝতে পারলো না তার সাথে কি হচ্ছে। দুটো এবিলিটিই একসাথে ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে।
"সুপার স্পিড"
জ্যাক এখানেই হতাশ হলো না। তার দুটো এবিলিটি কাজ না করলেও তার কাছে আরো কিছু ট্রিক্স রয়েছে এখন। জ্যাক তার সুপার স্পিড এবিলিটি ব্যবহার করলো এবং ডোয়ার্ক মল্টের থেকে একটু দূরে সরে গেলো।
"লাইটনিং ম্যানিপুলেশন"
জ্যাক তার স্কিল ব্যবহার করলো। এই টাওয়ারের টেস্ট ড্যানজনে প্রবেশের পর সে এই স্কিলটা পেয়েছিলো। স্কিলটা এই সময়ে তার প্রয়োজন ছিলো তার এট্যাক পাওয়ার বৃদ্ধি করার জন্য। জ্যাকের শরীরের চারদিক দিয়ে লাইটনিং তৈরী হতে শুরু করলো, যা সে তার ডান পায়ের দিকে ফোকাস করালো। আস্তে আস্তে শরীরের সমস্ত লাইটনিং জ্যাকের ডান পায়ের উপরে চলে গেলো। জ্যাক এবার দৌড়ে মল্টের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা উঁচু জাম্প দিলো। মল্টের উচ্চতার দ্বিগুন উচ্চতায় জ্যাক পোঁছে গিয়েছে। উপর থেকে সে একটা স্পিন দিলো তার শরীরকে এবং তার ডান পায়ের গোড়ালি দিয়ে একটা কিক দিতে লাগলো মল্টের দিকে। জ্যাকের পায়ের কিক থেকে এনার্জি বের হচ্ছিলো, যা একটা বিশাল টার্টেলের আকার নিয়েছে।
"টার্টেল ফিউরি"
জ্যাকের পায়ের গোড়ালি সহ একটা বিশাল টার্টেল ডোয়ার্ক মল্টের মাথায় লাগতে যাচ্ছিলো। তবে মল্ট সেটাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো যাতে বোঝা যাচ্ছিলো সে এখনো দেখতে পায় নি জ্যাক কোথায়। আর জ্যাক বুঝতে পারলো এবার হলেও তার এট্যাকটা কাজ করবে। তবে জ্যাকের কিকের ফলে তৈরী বিশাল টার্টেলটার মাথা মল্টের শরীরের সাথে স্পর্শ করার পূর্বেই সেটা ভ্যানিস হয়ে গেলো। জ্যাকের কিকটা মল্টের মাথায় লাগতে যাবে তার পূর্বেই মল্ট আস্তে এবং ক্লিন ভাবে এক পা পিছনে চলে গেলো। জ্যাকের কিকটা সোজা মাটিতে গিয়ে লাগলো। সে কিকের উপরে এনার্জি ব্যবহার করেছিলো, সাথে লাইটনিং এর ব্যবহারও করেছিলো। কিন্তু এখন কোনোটায় ছিলো না। তাই এভাবে মাটিতে কিক দেওয়ার ফলে তার পায়ের গোড়ালি এবং হাঁটুর হাড়ে অনেক গুরুতর ব্যথা পেলো। সাধারণত তার কিকের সাথে এনার্জি থাকলে সে আশেপাশের মাটিই ফাটিয়ে দিতে পারতো তার কিকে। কিন্তু সেটা হলো না। কি এবং কিসের জন্য তার এনার্জিটা এভাবে ভ্যানিস হয়ে গেলো সেটা এখনো বুঝতে পারলো না জ্যাক।
-->> মাস্টার আমার মনে হয় আমি ক্লান্ত বলে এনার্জি দিয়ে ফাইট করতে পারছি না। (জ্যাক)
-->> হার মেনে নাও, তুমি আমাকে হারাতে পারবে না। অবশ্য তোমার শরীরের এই অবস্থায় পারবে না অন্তত। (মল্ট)
কথাটা জ্যাকের প্রাইডে লাগলো আবারো। তাই সে তার ডান পায়ের ব্যথা নিয়েই উঠে গেলো ফাইট করার জন্য। হাতের স্পেস ব্রেসলেট থেকে সে তার আইটেম বের করে নিলো। ফায়ার এবং ওয়াটার ড্রাগন সোর্ড দুই হাতে নিয়ে জ্যাক দাঁড়ালো মল্টের সামনে।
"ইগনাইট"
সে তার দুটো সোর্ডকে ইগনাইট করে দিলো। হঠাৎ জ্যাকের ডান পিঠ থেকে আগুনের এবং বাম পিঠ থেকে পানির দুটো ডানা দেখা যাচ্ছিলো। এখানে ট্রেনিং করার সময় তার মাস্ক সে খুলে রেখেছে তাই তার ডান চোখ দিয়ে আগুনের অউরা এবং বাম চোখ থেকে পানির অউরা বের হতে দেখা যাচ্ছিলো। জ্যাক প্রস্তুত ছিলো ফাইটের জন্য তবে সে তার মাস্টারকে কোথাও দেখতে পেলো না। সে তার মাথাকে ঘুরিয়ে পিছনে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকালো। এবার ডোয়ার্ক মল্ট তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। মল্ট জ্যাকের কপালে শুধু তার একটা আঙ্গুল রাখলো আর সাথে সাথে জ্যাকের দুটো সোর্ডের ইগনাইট মুডই ক্যান্সেল হয়ে গেলো। জ্যাকের ফর্ম স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে জ্যাক তার সেন্স হারিয়ে ফেললো। অতিরিক্ত এনার্জি ব্যবহার এবং ট্রেনিং এর কারনে ক্লান্তির জন্য সে ঘুমাচ্ছে অনেক গভীর একটা ঘুমের মধ্যে চলে গিয়েছে। মল্ট দুই পা পিছনে ফিরলো তার জায়গা থেকে। জ্যাক দাঁড়িয়ে ছিলো তবে এবার সে ধপাস করে মাটিতে পরে গেলো চিৎ হয়ে। অবশ্য ব্যথা পেয়েছে কিন্তু তার গভীর ঘুমের কারনে সে এটা বুঝতেই পারলো না।
-->> আজকের পার্টিটা মনে হচ্ছে আমার স্টুডেন্টকে রেখেই করতে হবে। (মল্ট)
মল্ট কথাটা বলে সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। অনেকটা দূরে যাওয়ার পর সে জ্যাকের মাস্ক নিচে পরে থাকতে দেখলো। যেটা ধরলো এবং ফ্রিজবি নিক্ষেপ করার মতো নিক্ষেপ করলো। মাস্কটা ঠিক শুয়ে থাকা জ্যাকের মুখের উপরে গিয়ে পরলো। এবার মল্ট সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো।
* * * * *
(জ্যাক স্বপ্ন দেখছে)
সময়টা ছিলো অনেক পূর্বের। জ্যাক তখন কন্সটেলেশন অফ ওয়াটার, পোসেইডন ছিলো। অলিম্পাসের ১২ মেজর কন্সটেলেশনের মধ্যে পোসেইডনের নাম ছিলো। বড় ভাই হেডিস এবং ছোট ভাই জিউস দুজনের সাথে তুলনা করলে মেঝো ভাই পোসেইডন ছিলো তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল। অবশ্য তার দুর্বল হওয়ার পিছনেও কারন রয়েছে।
-->> আমি জিউসের মতো পাওয়ার এবং হেডিসের মতো রহস্যময়ী ব্যক্তি না। আমি পোসেইডন, যে ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে অলস একটি ব্যক্তি। (পোসেইডন)
পোসেইডন তার থ্রোনের উপরে বসে ছিলো। তার সামনে তার প্যালেসের অফিসিয়াল ব্যক্তিরা দাঁড়িয়ে ছিলো। তার মিনিস্টার তাকে উপদেশ দিচ্ছিলো কিন্তু পোসেইডন সেটার দিকে কোনো নজরই দিচ্ছিলো না।
-->> মাই কিং, আমরা জানি আপনি অনেক শক্তিশালী। তারপরও তো আপনার নিজের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। পূর্বের যুদ্ধে আপনি অনেক গুরুতর আহত হয়ে এসেছেন যেখানে আপনার দুই ভাই কোনো যুদ্ধেই অংশগ্রহন করে না। আপনি একজন কিং, আপনার কাজ আমাদের উপরে শাসন করা। আপনি কেনো যুদ্ধের ময়দানে যান তাহলে? (মিনিস্টার)
পোসেইডন নিজেকে অলস দাবী করলেও সে নিজের প্রজাদের জন্য অনেক কেয়ার করে। যুদ্ধের সময় সে তার নিজের সেনাবাহিনীদের দাড়িয়ে থাকার আদেশ দিয়ে নিজে একা শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে চলে যায়, যার ফলে অনেকবার তাকে বেশ গুরুতর আহত অবস্থাতেও ফিরে আসতে হয়েছে। অন্যদিকে তার ভাই জিউস যে অলিম্পাসের থ্রোনে এবং হেডিস যে আন্ডারওয়ার্ল্ডে বসে রাজ করছে তাদের কোনো সময় কোনো ফাইটের জন্য বের হতে হয় না, যদি কখনো হয় তাহলে তাদের শত্রুদের আর চিহ্ন থাকে না। তাদের সাথে তুলনা করলে পোসেইডনকে পূর্ব থেকেই অনেক দুর্বল ভাবা হয়। তবে এমন নয় যে অলিম্পাসের বাকি কন্সটেলেশনদের থেকে পোসেইডন। পোসেইডনও একজন মাইটি কন্সটেলেশন যাকে অলিম্পাসের সেরা কন্সটেলেশন গুলোও ভয় করে। এটার জন্য নয় যে পোসেইডনের কাছে কোনো হিডেন পাওয়ার রয়েছে বরং তাকে ভয় করার কারনই হলো সে অনেক অলস। পোসেইডন পাওয়ার, সম্পদ, ভালোবাসা, সম্মান কোনো কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে না। তার জন্ম থেকেই তার জীবনের কোনো টার্গেট ছিলো না। তাই সব সময় তার সময়টা মজা করেই কাটিয়ে দিয়েছে। কখনো কোনো ব্যাপারে সে সিরিয়াস হয় নি। অবশ্য তার সম্পর্কে সবাই এটাই জানে। পোসেইডন তার মিনিস্টারের কথা শুনে তার থ্রোন থেকে উঠলো এবং বলতে লাগলো,
-->> তোমরা জানো, আমি তোমাদের উপরে রাজ করতে চাই না। তারপরও আমাকে বার বার কিং কিং বলে আমার উপরে অনেক দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে এসেছো এবং ভবিষ্যতেও হয়তো দিবে। আমি এসব নিয়ে অনেক ক্লান্ত। আমি যাচ্ছি অলিম্পাসের কন্সটেলেশন অফ লাভের(ভালোবাসা) কাছে। (পোসেইডন)
পোসেইডন কথাটা বলার সাথে সাথে এক পা বাড়ালো এবং একটা শীষ দিলো। তার শীষে বাইরে থেকে একটা পানির রথ উড়তে উড়তে প্যালেসের মধ্যে চলে আসলো। পোসেইডন লাফ দিলো এবং রথের উপরে দাঁড়িয়ে পরলো। এবার রথের সামনে থাকা স্ক্যালা পোসেইডনকে নিয়ে প্যালেস থেকে বেরিয়ে গেলো এবং আকাশে অলিম্পাসের দিকে রওনা দিলো। সবাই তাকিয়ে ছিলো পোসেইডন এর বের হওয়ার দিকে,
-->> আমাদের কিং আবারো সব রাজ্যের কাজ আমাদের উপরে ছেড়ে চলে গেলো। (মিনিস্টার)
পোসেইডনের যাওয়ার ফলে তার মিনিস্টার সকল কাজের দায়িত্ব হাতে তুলে নিলো। আর অন্যদিকে পোসেইডন চলে গেলো লীলা খেলতে। জ্যাকের স্বপ্নটা জায়গা চেঞ্জ করলো। সে আবারো তার অতীতের একটা দৃশ্য দেখতে লাগলো। যেখানে সে মানে পোসেইডন দাঁড়িয়ে ছিলো অনেকটা আড়ালে। জীবনে পোসেইডন যদি কাউকে সত্যিকারে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা হবে মেটিস। তবে নিজের চোখে নিজের ছোট ভাইয়ের সাথে যদি নিজের ভালোবাসাকে কেউ দেখে তাহলে হয়তো কারো মনই আর ঠিক থাকবে না। এরকম দৃশ্য দেখলে সবার হৃদয় ভেঙে যাবার কথা। পোসেইডনের মনটাও ভেঙে গিয়েছিলো। পোসেইডন আড়ালে না দাঁড়িয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেলো।
জ্যাকের স্বপ্নটা আবারো চেঞ্জ হলো। এবার সে মানে পোসেইডন একটা রুমের মধ্যে ছিলো। যেখানে তার সাথে কথা হচ্ছিলো মেটিসের। এটাই তাদের দুজনের শেষ কথা ছিলো। এর পরে পোসেইডন আর কোনোদিন মেটিসকে দেখতে পারে নি। দেখবেই বা কিভাবে মেটিস এরপরে জিউসের ভাইয়ের পেটের মধ্যে চলে গিয়েছিলো। পোসেইডন দাঁড়িয়ে ছিলো নিশ্চুপ হয়ে আর মেটিস কথা বলছে।
-->> যদি আমার কোনো বন্ধু থাকে তাহলে সেটা একমাত্র তুমিই পোসেইডন। আমি জানি আমার জন্য তুমি অনেক কেয়ার করো, কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য তুমি কিছু করো। তবে আমি চাইবো তুমি অন্য কারো জন্য কিছু একটা করো। (মেটিস)
-->> হয়তো ও জন্ম নেওয়ার সময় আমি থাকবো না, তাই ওকে দেখে ওর নামটা আমি ঠিক করতে পারবো না। তবে পোসেইডন আমার বন্ধু হয়ে আমাকে একটা কথা দাও তুমি। আমার সাথে যা হবে তুমি সেটা আমার মেয়ের সাথে হতে দিবেনা। (মেটিস)
মেটিসের কথা শুনে পোসেইডন কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। তার চোখ দিয়ে পানি পরছে না, কারন পানি অনেক আগে থেকেই পরা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে শুধু দাঁড়িয়ে ছিলো শক্ত হয়ে। মেটিসকে এখান থেকে সে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু মেটিস তার ডেস্টিনিকে মেনে নিয়েছে যার বিরুদ্ধে পোসেইডন কিছুই করতে পারবে না। তবে একটা জিনিস পোসেইডন ঠিকই করতে পারবে, সেটা হলো মেটিসের কথাটা রাখা। ভালোবাসার মানুষটার শেষ কথা রাখার মধ্যেও একটা তৃপ্তি রয়েছে যেটা পোসেইডন সেদিন বুঝেছিলো।
-->> ঠিক আছে মেটিস। (পোসেইডন)
-->> এথিনা, ওর নামটা এথিনা রেখো। আর প্লিজ পোসেইডন, ওকে বলে দিয়ো ওর আম্মা ওকে অনেক অনেক ভালোবাসে এবং মিস করে। (মেটিস)
জ্যাকের স্বপ্নটা আবারো চেঞ্জ হলো। সে অন্য একটা জায়গায় ছিলো। জায়গাটা ছিলো টারটারাস। সেখানে সে এসেছে তার কথা রাখার জন্য। এথিনা যার জন্মটা অনেক আশ্চর্যজনক ভাবে হয়েছিলো। তার জন্ম নিয়ে অনেকে অনেক থিওরি দিয়েছে। তবে সবচেয়ে মানানসই যে থিওরি ছিলো সেটা হলো, মেটিসের পেটে এথিনা বড় হচ্ছিলো এমন সময়েই জিউস মেটিসকে জীবিত খেয়ে ফেলেছিলো। যেহেতু জিউস তাই দুই ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি ছিলো যে তার বাবার টাইটান ব্লাড নিজের মধ্যে বহন করছিলো তাই কাউকে জীবিত খাওয়া তার জন্য কোনো ব্যাপারই ছিলো না। মেটিসকে জীবিত খাওয়ার পরে জিউসের শরীর থেকেই জন্ম হয় এথিনার। বিষয়টা জিউসের জন্য এতোটা লজ্জাজনক একটা বিষয় ছিলো যার কারনে এথিনার জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই তাকে নিক্ষেপ করে ফেলে দেওয়া হয় টারটারাসে। টারটারাস অনেকটা আন্ডারওয়ার্ল্ডেরই মতোই, তবে পার্থক্য হলো এখানে সকল টাইটান এবং টাইটানের সউল গুলো বন্ধী রয়েছে। অন্ধকার এবং ভয়ঙ্কর জায়গার মধ্যে সদ্য জন্ম নেওয়া একটা বাচ্চাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো যে কতটা সময় সেখানে ছিলো তা সঠিক করে কেউ বলতে পারবে না। এথিনার জন্মের বিষয়টা সবচেয়ে গোপনীয় বিষয় ছিলো অলিম্পাসের মধ্যে। যা অলিম্পাসের ১২ কন্সটেলেশনের মধ্যে একজন হওয়ার পরও পোসেইডন জানতো না। তবে যেদিন সে শুনেছিলো সেদিনই তার মেটিসের কথা মনে পরে যায় আর তাই এখন পোসেইডন দাঁড়িয়ে আছে টারটারাসের মধ্যে। এই জায়গাতে কোনো জীবিত ব্যক্তি প্রবেশ করার সাহস করে না। অলিম্পাসের সবচেয়ে শক্তিশালী কন্সটেলেশন জিউস নিজেও কোনো দিন এই জায়গাতে আসার সাহস করতো না। সেই জায়গায় পোসেইডন সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে কথা দিয়েছিলো, সেই কথাটার জন্য এমন একটা ভয়ানক জায়গার মধ্যে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোনো অলিম্পিয়ান কন্সটেলেশন টারটারাসে প্রবেশ করার সাহস করে না কারন এই জায়গার মধ্যে টাইটান এবং টাইটানদের সউল বন্ধী আছে। যারা এতোটা শক্তিশালী অস্তিত্ব য, জিউসের শরীরকেও নিজেদের বানিয়ে ফেলতে পারবে। আর সেখানে তো পোসেইডন সামান্য একজন ওয়াটার কন্সটেলেশন ছিলো। পোসেইডন ভয়ে ছিলো, তবে তার ভয়টা তার কথা না রাখতে পারার ভয়ের কাছে কিছুই ছিলো না। সে শুধু প্রতিজ্ঞা করছিলো যাতে বাচ্চাটার কিছু যেনো না হয়। পোসেইডন বসে ছিলো স্ক্যালার উপরে। পানির তৈরী ঘোড়া, যেটা যতদিন এক বিন্দু পানি পানি থাকবে ততদিন মারা যাবে না। তার উপরে বসে পোসেইডন এসেছে এই হেলের মতো একটা জায়গায়। অনেক খোঁজার পর পোসেইডন কোনো বাচ্চাকে দেখতে পারে নি। তবে অনেক খোঁজার পরে একটা বিশাল বাচ্চা টাইটানকে ঠিকই দেখতে পেরেছিলো। একটা বাচ্চা টাইটান মেয়ে যে কেঁদেই যাচ্ছিলো। অন্ধকারে তেমন ভালো করে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। তবে মেয়েটার শরীরে থাকা উজ্জ্বল আলোতে তাকে পুরো ক্লিয়ার ভাবে দেখা যাচ্ছিলো। এটাই ছিলো প্রথম যেদিন পোসেইডন প্রথম এথিনাকে দেখলো।
জ্যাকের স্বপ্ন আবারো বদলে গেলে, সে মানে পোসেইডন তার থ্রোনের উপরে বসে ছিলো। এটা তার নিজ রাজ্যের প্যালেস ছিলো না। বরং এটা আলাদা একটা জায়গা ছিলো যেখানে একজন স্পেশাল ব্যক্তিকে রেখেছে। ছোট একটা মেয়ে যার উচ্চতা পোসেইডন এর হাটু পর্যন্ত হবে সে পোসেইডন এর সামনে একটা সোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-->> আঙ্কেল তুমি বলেছো আমার বাবা আমাকে সেই অন্ধকার জায়গার মধ্যে বন্ধী করে রেখেছিলো। তাহলে আমাকে কেনো আবার তার কাছে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছো? আমি মোটেও তার কাছে যেতে চাই না। আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। আমি সেই অন্ধকার জায়গায় আর যেতে চাই না। (এথিনা)
এথিনা কথাটা পোসেইডনের পা জরিয়ে ধরে বলতে শুরু করেছে। পোসেইডন এথিনাকে ছারিয়ে নিলো। এথিনা দেখতে তেমন সুন্দরী নয় এখন। তার শরীর রোগা ছিলো, উচ্চতা বেশী ছিলো না সেই সাথে চুল গুলো এলোমেলো। সব মিলিয়ে বলা যাচ্ছিলো যে তার যত্ন করার মতো কেউ এখানে ছিলো না। পোসেইডন হাঁটু গেঁড়ে বসলো এবং এথিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
-->> এথিনা, জানো তোমার আম্মা কি বলেছিলো শেষে আমাকে? (পোসেইডন)
-->> কি আঙ্কেল। (এথিনা)
-->> তোমার নামটা এথিনা রাখতে বলেছিলো। আর বলেছিলো সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে এবং অনেক অনেক মিস করে। (পোসেইডন)
পোসেইডনের কথাটা শুনে এথিনা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো,
-->> আমার আম্মাকে যে হত্যা করেছে তার কাছে আমি কিভাবে যাবো আঙ্কেল? (এথিনা)
-->> এথিনা আমি একটা কথা বলি, কান দিয়ে শোনো। আমরা কন্সটেলেশন গুলো যদি কখনো কাউকে কোনো রকম ভাবে সাহায্য করি তাহলে যে ব্যক্তি সাহায্য পেয়েছে সে তার জীবন দিয়ে হলেও ফিরতি কোনো সাহায্য করে। আমি যেমনটা তোমাকে সাহায্য করেছি সেই অন্ধকার জায়গা থেকে এনে। এখন তো তোমার থেকেও আমি একটা সাহায্য আশা করছি তাই না? (পোসেইডন)
এথিনা কান্না মাখা চোখ নিয়েই বলতে লাগলো,
-->> হ্যাঁ আঙ্কেল আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও সব সময় আপনার সাথে থাকতে রাজি আছি। (পোসেইডন)
-->> আমি এটা চাই না। এথিনা আমি চাই যে জিউস তোমাকে লজ্জায় টারটারাসের মধ্যে বন্ধী করে রেখেছিলো তুমি শক্তিশালী হয়ে সেই জিউসের কাছে ফিরে যাবে। যে জিউস তোমাকে তার মেয়ে বলে স্বিকার করে নি। আমি চাই তুমি সেই জিউসের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান বলে ঘোষিত হবে। কি পারবে না এটুকু করতে? (পোসেইডন)
এথিনা এটা আশা করে নি। সে রাগে পোসেইডনের কাছ থেকে চলে গেলো। এথিনা কোনো ভাবেই চাচ্ছিলো না জিউস নামক মনস্টারের কাছে ফিরে যেতে যে নিজের ছোট একটা বাচ্চাকে অন্ধকার হেলের মধ্যে ফেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। তবে শত হলেও এথিনা পোসেইডনের কথা ফেলতে পারে না। এই একটা ব্যক্তি যাকে সে তার জীবন দিয়ে হলেও বিশ্বাস করে। একটু পরে এথিনা আবারো আসলো,
-->> হ্যাঁ আঙ্কেল। আমাকে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দিন। আমি আপনার কথা রাখবো। আমি জিউসের সবচেয়ে পছন্দের সন্তান হয়ে উঠবো। (এথিনা)
এথিনা নিজের চোখের পানি মুছে আবারো সোর্ড হাতে নিয়ে পোসেইডনের সামনে দাঁড়ালো,
"মেটিস, তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমি এথিনাকে ওর প্রাপ্য জায়গাতেই বসিয়ে দিবো। হ্যাঁ আমি তোমার কথা রাখবো।" (পোসেইডন)
জ্যাকের স্বপ্নটা আবারো চেঞ্জ হলো। তবে এবার তার কোনো অতীতের কোনো স্মৃতি চেঞ্জ হলো না। বরং জায়গাটা তার জন্য পুরো নতুন ছিলো। যেখানে তার হার্টটা অনেক দ্রুত বিট করছিলো। সামনে চেনা পরিচিত একটা মুখ সে দেখতে পারলো। এবার সে পোসেইডন না বরং জ্যাক হয়েই আছে। এবার কোনো ফ্লাসব্যাক নয় বরং সত্যি সত্যি সব হচ্ছিলো তার সামনে?
-->> মেটিস? (জ্যাক)
-->> হাই পোসেইডন। (মেটিস)
* * *
To Be Continued
* * *
কেমন হলো জানাবেন।